আজ , বুধবার, ২১ মে ২০২৫

রাউজানে ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে যুবদল কর্মীকে হত্যা

লেখক : সাহেদুর রহমান মোরশেদ | প্রকাশ: ২০২৫-০৪-২০ ২০:৫১:৫৬

 

রাজনৈতিক শত্রুতার বলি মানিক, গত ৯ মাসে রাউজানে ৯টি খুনে আতঙ্কে এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় রাতে ভাত খাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহ (৩৬) নামের এক যুবদলকর্মী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীবউল্লাহ পাড়ার ভান্ডারী কলোনির একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মানিক স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতার অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকার পর গত বছর অক্টোবর মাসে তিনি দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করলেও মানিক মাঝে মাঝে গ্রামে আসতেন। গ্রামে এলে তিনি পরিচিত এক বাসায় খাওয়াদাওয়া করতেন। শনিবার রাতে তিনি এক যুবদল কর্মীর সঙ্গে ওই বাসায় ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় ৮-১২ জনের একটি অস্ত্রধারী দল বাসায় ঢুকে তাকে কাছ থেকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তার শরীরের তিনটি স্থানে গুলি লাগে।

বাসার গৃহিণী জানান, ঘটনার সময় তিনি পাশের ঘরে ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে এসে দেখতে পান মানিক রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন। ঘটনাস্থল থেকে দুর্বৃত্তরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।

নিহতের পরিবারের দাবি, মানিক কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হুমকি ও চাপে ছিলেন। এর আগে তার ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে এবং তার ব্যবসা ও আত্মীয়ের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। পরিবারের মতে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

নিহতের মা বলেন, “আমার ছেলে রাজনীতির জন্য অনেক ত্যাগ করেছে। এতদিন পর দেশে ফিরে এলাকায় একটু স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চেয়েছিল, তাও হলো না। আমার নাতি-নাতনিরা এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে?”

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। মানিকের মাথা, উরু ও হাঁটুতে গুলি লেগেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সময় মানিকের সঙ্গে থাকা আরেকজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি—তাকে অপহরণ করা হয়েছে নাকি তিনি পালিয়ে গেছেন, সে বিষয়ে খোঁজ চলছে।”

জানা গেছে, নিহত মানিক রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে কয়েক দফা হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে ছিলেন। সম্প্রতি এলাকার দুটি গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষও ঘটে।

স্থানীয়দের মতে, রাউজান উপজেলায় গত ৯ মাসে অন্তত ৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগের পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার বা স্থানীয় বিরোধকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় জনমনে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

নিহত মানিকের পরিবার ও এলাকাবাসী দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।