রাউজানে মাকে কুপিয়ে জখমের ভিডিও ভাইরাল অন্ধকারে টর্চ জ্বেলে সাহসী মেয়ের ভিডিও, হামলাকারী সনাক্ত -একজন আটক
লেখক : সাহেদুর রহমান মোরশেদ | প্রকাশ: ২০২৫-০৪-১৮ ১৯:৫১:৫৬


সাহেদুর রহমান মোরশেদঃঃ
রাত তখন প্রায় ২টা। চারদিক নিঝুম—শুধু হঠাৎ করে চিৎকার, আর্তনাদ আর শিশুর কান্নায় থমকে যায় নিস্তব্ধতা। চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার সুলতানপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া এ এক নির্মম বাস্তবতা—যেখানে এক মাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আর তার বড় মেয়ে, ভয়কে জয় করে এক হাতে টর্চলাইট জ্বেলে, অন্য হাতে মোবাইলে ধারণ করে পুরো ঘটনা। এখন সেই ভিডিও-ই হয়ে উঠেছে ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
আহত নারীর নাম তাহেরা আকতার (৩৮)। তাঁর স্বামী আবদুল হাকিম একজন মাছ ব্যবসায়ী। হামলার সময় তাঁর দুই মেয়েই ঘরে ছিলেন—একজন মাত্র তিন বছরের শিশু, অন্যজন বড় মেয়ে সানজিদা, যিনি নিজের মাকে বাঁচাতে না পারলেও পুরো ঘটনা ভিডিও করে রেখেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তাহেরা আকতারকে ধারালো কিরিচ দিয়ে একাধিকবার কোপানো হচ্ছে, তিনি বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন, আর পাশে ছোট মেয়ে আতঙ্কে কাঁদছে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার ভিডিও শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন মেয়েটি নিজেই। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়, নড়ে ওঠে পুরো রাউজানসহ চট্টগ্রামবাসী। সবার মুখে একটাই কথা—“এ কেমন বর্বরতা!”
জমি নিয়ে বিরোধ, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হামলাঃঃ
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাহেরা আকতার ও আবদুল হাকিমের সঙ্গে প্রতিবেশী মঈনুদ্দীন ছরওয়ারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মঈনুদ্দীনের পক্ষ থেকে ওই জমিতে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করলে, তাহেরা প্রতিবাদ করেন। তখনই সংঘটিত হয় এই ভয়াবহ হামলা।
তাহেরা আকতার বলেন, “তারা আমাকে মেরে ফেলতে এসেছিল। আমার স্বামীকে পেলে তাকেও হত্যা করত। আমার বড় মেয়ে বুদ্ধি করে ভিডিও করেছে বলেই এখন প্রমাণ আছে। তারা আমার কাছ থেকে এক লাখ তিন হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইন ও দুলও নিয়ে গেছে।”
তিনি আরও জানান, হামলাকারীদের মধ্যে মঈনুদ্দীনের ভাতিজা সুমন মুন্সি ও মাসুমের নাম শনাক্ত করা গেছে। সুমন মুন্সিকেই ভিডিওতে কিরিচ দিয়ে কোপাতে দেখা গেছে।
ছোট মেয়ের কান্না, সাহসী মেয়ের প্রমাণঃঃ
ঘটনাটি মানবিকভাবে আরও গভীর, কারণ এই হামলার সময় ছোট্ট মেয়েটি নির্জন রাতে চিৎকার করে কাঁদছিল, অথচ বড় মেয়ে, যাঁর বয়স মাত্র ১২-১৩ বছর, নিজের ভয় ভুলে গিয়ে টর্চলাইট হাতে মাকে কোপানোর পুরো দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। বর্তমানে সেই ভিডিও-ই থানার তদন্তের মূল প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয় একজন বৃদ্ধ বলেন, “মেয়েটার সাহস না থাকলে হামলাকারীরা পালিয়ে যেত, আর কেউ বিশ্বাসও করত না। ভিডিও না থাকলে এটা অন্ধকারেই চাপা পড়ে যেত।”
একজন আটক, পুলিশের তদন্ত অব্যাহতঃঃ
এদিকে ঘটনার পর রাউজান থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের একজন সুমন মুন্সিকে আটক করেছে। তিনি রাউজান পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহিউদ্দিন মাস্টারের ছেলে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। এখন পর্যন্ত একজনকে আটক করা হয়েছে। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলেই আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ভিডিওটি তদন্তে সহায়ক প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
ভয়াবহ এই রাতের পরঃঃ
এই ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন— এমন হামলা কীভাবে সম্ভব? তারা চান, দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥
রাউজানবার্তা সম্পাদক/ প্রকাশকের নোট:
এই প্রতিবেদনটি শুধু একটি সহিংস ঘটনার বিবরণ নয়, এটি একজন কিশোরীর অসীম সাহস, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা এবং একটি পরিবারকে রক্ষা করার চেষ্টা—যা আমাদের সমাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
© 2019 - All Rights Reversed raozanbarta24.com
Web Developed By : HostBuzz Inc