আজ , বুধবার, ২১ মে ২০২৫

যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা: আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান, পরিবারে শোকের মাতম

লেখক : সাহেদুর রহমান মোরশেদ | প্রকাশ: ২০২৫-০৩-১৬ ১৯:২২:২২

রাউজানবার্তা প্রতিবেদকঃ

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় কমর উদ্দিন জিতু (৩৬) নামে এক যুবদল কর্মীকে ছুরিকাঘাত ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (১৬ মার্চ) রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের আমিরহাট বাজার ব্যবস্থাপনা অফিসের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত কমর উদ্দিন জিতু হলদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্ত্তা গ্রামের মনুপেঠান তাঃবাড়ীর বাসিন্দা আলহাজ্জ মুহাম্মদ আলীর ছেলে।

কি ঘটেছিল সেদিন?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হলদিয়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা জামাল উদ্দিন তালুকদার, মঈনুদ্দিন বিপুল এবং কমর উদ্দিন জিতু একসঙ্গে আমিরহাট বাজার ব্যবস্থাপনা অফিসে যান। সেখানে তারা জানতে চান কেন এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিমের ব্যানার টাঙানো আছে। বাজার কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যানার সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলে তারা শান্ত হন এবং ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে, তারা ব্যানারটির ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

স্থানীয়দের মতে, কিছুক্ষণ পর উপজেলা বিএনপির সদস্য মহিউদ্দিন জীবন ২০-৩০ জন কিশোর গ্যাং সদস্যসহ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এরপর হঠাৎ করেই তারা হামলা চালিয়ে যুবদল কর্মী জিতুকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত ও মারধরের ফলে তিনি গুরুতর আহত হন।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম কামাল। তিনি হামলাকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন এবং নিজেও মারধরের শিকার হন বলে দাবি করেন।

জিতুর মৃত্যু ও অভিযুক্তদের পালিয়ে যাওয়া!

গুরুতর আহত অবস্থায় কমর উদ্দিন জিতুকে প্রথমে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এদিকে, ঘটনার পর রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ অভিযানে নামে এবং গর্জনিয়া এলাকার আবদুল কাদের (প্রকাশ কলা কাদের) ও আবদুল হাদীর ছেলে খোরসেদের বাড়ি ঘেরাও করে তাদের আটকের চেষ্টা চালায়। তবে, পুলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে তারা আগেই পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি জুমার নামাজের আগ মুহূর্তে আমিরহাট বাজারে জিতু ও খোরসেদের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। সেই ঘটনায় জিতু খোরসেদকে ছুরিকাঘাত করেছিল বলে জানা যায়। পরে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উভয়পক্ষকে মিটমাট করিয়ে দেন।

ফেসবুক পোস্ট ও রাজনৈতিক উত্তেজনা!

ঘটনার পরপরই জিতুর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে মহিউদ্দিন জীবন ও নুরু সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল। স্থানীয়দের মতে, এই স্ট্যাটাসও হত্যাকাণ্ডের একটি কারণ হতে পারে।

হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিহত জিতু সম্প্রতি প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। রাত ৩টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের মা-বাবা ও বোন শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সাবের সুলতান কাজল বলেন, “আওয়ামী কিশোর গ্যাং কিছু নামধারী বিএনপির ছত্রছায়ায় থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।”

এদিকে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে মাটি কাটার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও যুবদল বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাধারণ জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে দলটির ওপর।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ জানায়, নিহতের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ

এ ঘটনায় রাউজান থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।