রাউজানে সরাসরি সরকারী গুদামে বিক্রয় করতে বাধা মধ্যস্বত্ব ভোগীরা

প্রতীকী ছবি

শফিউল আলম, রাউজানবার্তাঃ
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় এবারের শুস্ক মৌসুমে ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার প্রান্তিক কৃষক বেরো ধানের চাষাবাদ করেন। ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ২৯ হাজার মেট্রিক টন বেরো ধান উৎপাদন হয়।

সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা করে ক্রয় করলে ও কৃষকেরা সরকারী খাদ্য গুদামে তাদের ধান বিক্রয় করতে পারছেনা।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করতে গেলে ধান শুকনা নেই ধানে চিঠা এসব অজুহাত দেখিয়ে কৃষকের শুকনা ও চিঠামুক্ত ধান ক্রয় করেনা খাদ্য গুদামের কর্মর্কতা ও কর্মচারীরা।

কৃষকেরে কাছ থেকে সস্তা দামে ধান ক্রয় করে রাউজানের একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করে আসছে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা শুকনা নয় চিঠাযুক্ত ধান নিয়ে গেলে ও খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা যোগসাজস করে মধ্যস্বর্ত্ব ভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছে।

মধ্যস্বত্ব ভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই কোন চাষাবাদ না করেও রাউজান উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষি উপকরন সহায়তা কার্ড করে নিয়েছেন। এসব ভুয়া কৃষক প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সস্তা দামে ধান ক্রয় করে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয় করছেন।

অপরদিকে রাউজানের চাউল ব্যবসায়ীরা ও রাইস মিলের মালিকেরা সকলেই সিন্ডিকেট করে কৃষকের কাছ থেকে সস্তা দামে ধান ক্রয় করছেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বোরো ধানের চাষাবাদের সময়ে ও ধান কেটে ঘরে তুলতে যে টাকা খরচ হয়েছে ও কৃষি শ্রমিকের মজুরীর টাকা দিতে বাধ্য হয়ে সস্তা দামে ধান বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাউজান উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা অসিত বরন তালুকদারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ২৯ মে বুধবার বিকাল ৩ টার সময়ে রাউজান উপজেলা পরিষদ ভবনের ৪র্থ তলায় তার অফিসে গেলে অফিস তালাবদ্ব দেখা যায়।

পরবর্তী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা অসিত বরন তালুকদারকে ফোন করে কৃষকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা অসিত বরন তালুকদার বলেন, খাদ্য গুদামে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে না চাইলে আমাকে ফোন করে কৃষকরা জানালে আমি ব্যবস্থা নেব।

রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় এবারের শুস্ক মৌসুমে ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার প্রান্তিক কৃষক বেরো ধানের চাষাবাদ করেন। ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ২৯ হাজার মেট্রিক টন বেরো ধান উৎপাদন হয়।

কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বোরো ধান বিক্রয় করছে সস্তা দামে । রাউজানের কৃষকরা বোরো ধান বিক্রয় করতে ব্যার্থ হয়ে জীপও ট্রাক, টমটম ভর্তি করে রাঙ্গুনিয়ার রাণীর হাট বাজার ঠান্ডাছড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রয় করছে।

রাউজানের দক্ষিন হিংগলা এলাকার কৃষক কাজী আসলাম দুই মেট্রিক টন ধান রানীর হাট বাজারে নিয়ে বিক্রয় করেন বলে জানান। কৃষক কাজী আসলাম বলেন, ধান কেটে ঘরে তোলার পর কৃষি শ্রমিকের মজুরীর টাকা দিতে ধান বিক্রয় করতে চাইলে রাউজানে ধান বিক্রয় করতে ব্যর্ত হয়ে রানীর হাট বাজারে জীপ ভর্তি করে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি ধান ২৪ টাকা করে বিক্রয় করে কৃষি শ্রমিকের মজুরীর টাকা পরিশোধ করি।

কৃষক কবির আহম্মদ জানান, রাউজানে ধান বিক্রয় করতে ব্যার্থ হয়ে রানীর হাট বাজারে উৎপাদিত হাইব্রীড জাতের বোরো ধান প্রতি কেজি ২৩ টাকা ৫০ পয়সা করে বিক্রয় করেছি।

রাউজান পৌরসভা কৃষক লীগের সভাপতি আলী আজগর চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক তসলিম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান ক্রয় করার কোন প্রচার ও প্রচারনা করেনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। মাধ্যস্বত্ব ভোগীদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে গোপন আতাতঁ করে খাদ্য কর্মকর্তা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা লটারীর মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় করার উদ্যোগ রাউজানের কোন কৃষক জানেনা। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ৩০টাকা করে ক্রয় করবে। যেসব কৃষক সরকারী গুদামে ধান বিক্রয় করবে তাদেরনকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাছাই বাছাই করার পর লটারীর মাধ্যমে কৃষকের নাম র্নিবাচিত করে তাদের কাছ থেকে বোরা ধান ক্রয় করবে খাদ্য গুদাম।

কৃষকদের ধান বিক্রয় করতে অনলাইনে আবেদন করার বিষয়টি কৃষকরা জানেন কিনা জানতে চাইলে, উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, কৃষকের মধ্যে ধান ক্রয় করার বিষয়টি প্রচার প্রচানার দায়িত্ব খাদ্য কর্মকর্তা অফিসের। খাদ্য কর্মকর্তা কৃষকদের মধ্যে প্রচার ওপ্রচারনা করেছেন কিনা তা খাদ্য কর্মকর্তারা বলতে পারবে।

রাউজানে উপজেলা কৃষি অফিসার আরো বলেন, রাউজানে সরকারী গুদামে বোরো ধান ক্রয় করার জন্য অনলাইনে ১শত ৯১ জন কৃষক আবেদন করেন। তাদের মধ্যে থেকে ৮১ জন কৃষক লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন ধান ক্রয় করার জন্য। লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকদের মধ্যে ডাবুয়া ইউনিয়নের কোন কৃষকের নাম নেই, হলদিয়া ইউনিয়নে ১০ জন কৃষকের নাম রয়েছে। ৭ হাজার কৃষকের মধ্যে ৮১ জন কৃষক বোরো ধান বিক্রয় করার সুযোগ পাবে।