মানবতার অগ্রদূত বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)

এম. এ. মুরাদঃ

“মাইজভান্ডারে উঠেছে তৌহিদের নিশানা ঘুমাইওনা মায়া ঘুমে আখেরি জামানা”

মহান ১০ পৌষ ইমামুল আওলিয়া হুজুর গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (ক.)’র বেলায়তের বাগানের মহান ফুল, বেলায়তের মহান সূর্য বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র পবিত্র খোশরোজ শরিফ।

তিনি ১০ পৌষ ১৩৩৫ বাংলা, ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৮ইং জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৬ আশ্বিন ১৩৯৫, ১৩ অক্টোবর ১৯৮৮ ইং ০১ রবিউল আউয়াল দুনিয়া থেকে পর্দা করেন। তিনি গাউসুল আযম শাহ্ সুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র প্রপৌত্র, খাদেমুল ফোক্বারা হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক.) ও শাহজাদী সৈয়দা সাজেদা খাতুন (রহ.)’র বড় সাহেবজাদা।

তিনি মাদারজাত অলি আল্লাহ্। মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার প্রবর্তক ও খাতেমুল আউলিয়া হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র পবিত্র শোণিত ও বেলায়তের উত্তরাধিকারী হিসেবে অছি-এ-গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক.) তাঁর সুদীর্ঘ কর্ম ও তাৎপর্যময় জীবনে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার স্বরূপ উন্মোচকের দায়িত্ব পালন করে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকা ও দর্শন সম্পর্কে সকল ধরনের বিভ্রান্তি ও জিজ্ঞাসার জবাব প্রদান করেছেন। মানবকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি একাধারে কামেলে মোকাম্মেল অলি উল্লাহ সর্বোপরি সমকালীন জগতে তিনি “যুগসংস্কারক” এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর এ কর্মধারার ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য সন্তান এবং গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর আমানতের উত্তরাধিকারী ব্যক্তিত্ব শাহানশাহ্ হযরত শাহ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) কে স্বীয় প্রতিনিধিত্বের শ্রেষ্ঠ আসনে অভিষিক্ত করে বেলায়তের সর্বোচ্চ সম্মানিত অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন। ফলে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) একই কর্মধারায় তথা হেকমতযোগে মানুষের মাঝে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার আধ্যাত্মিক জ্যোতি বিকিরণ করতঃ মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার বিকাশে এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। তাই আশেক-ভক্তগণ তাঁকে ‘চেরাগে গাউসুল আযম’, ‘নুর-এ-গাউসুল আযম’ প্রভৃতি অভিধায় সম্বোধন করেন। তিনি বিশ্বঅলি নামে সমধিক পরিচিত।

তাঁর অসংখ্য কালামের (বাণী) মধ্যে কালজয়ী একটি কালাম হলো, “হালাল খাও, নামায পড়, আল্লাহ্ আল্লাহ্ জিকির কর; সব সমস্যা মিটে যাবে”। এই অমিয় বাণীর মাধ্যমে তিনি মানুষকে হালাল রুজি আর্জনপূর্বক নিজেকে পবিত্র করে, তারপর নামায আদায় করার জন্য বলেছেন। নামায আদায় সম্পর্কে তিনি আরো বলেছেন, “নামায আল্লাহর হেকমত, নামায না পড়লে হেকমতের ক্ষতি হয়”। সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির তথা স্মরণের কথাও তিনি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন। তিনি কখনো জজবা হালে বলেন, “মানুষ আমার কাছে শুধু দুনিয়ার জন্য আসে। ধন, দৌলত, টাকা, পয়সার জন্য আসে। আল্লাহ্ পাওয়ার জন্য কেউ আসে না।” মূলত আল্লাহ্র ওলীগণ মানব কল্যাণের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন এবং সর্বদা আল্লাহ্র রাস্তায় মানবজাতিকে আহ্বান করেন।

বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন মানবতার বাতিঘর। কার কি প্রয়োজন তিনি তা আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলতে পারতেন। কেউ অসুস্থ, কারো মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা প্রয়োজন তিনি স্বশরীরে সেখানে উপস্থিত হয়ে মানুষের কষ্ট লাগব করেছেন। সারাজীবন মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

তাঁর একমাত্র শাহজাদা, বর্তমান গাউসিয়া হক মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন SZHM ট্রাস্টের সম্মানিত ম্যানেজিং ট্রাস্টি শাহ্ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান প্রকাশ মওলা হুজুর মাইজভাণ্ডারী (ম.) সম্পর্কে বিশ্বঅলি কালাম করেছেন- “আমার হাসান মিয়া আল্লাহর মস্তবড় অলি। মানুষের কল্যাণের জন্য এসেছেন। সাধ্যমতো ইজ্জত-সম্মান করবেন।” আজকে তাঁর এই অমিয় বাণী সত্যি বলে প্রমাণিত।

মওলা হুজুর মাইজভাজরী (ম.) মানবতার রোল মডেল, তিনি যে জগতের কল্যাণের জন্য এসেছেন তার প্রমাণ আজ বিশ্ব জুড়ে। SZHM ট্রাস্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা মানবতার সেবায় বিলিয়ে দিচ্ছেন। দুস্থ মানুষের সেবা তথা হক্কুল ইবাদ আদায়ে, অতুলনীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই ট্রাস্ট বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সর্বজীবের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমাজের দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও নিঃস্বদের সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে।

জনকল্যাণমূলক কাজ করার জন্য নিবেদিত প্রতিষ্ঠানটি দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বমানের সুবিধা সম্বলিত উন্নত দেশ গঠনে (১) শিক্ষা (২) দারিদ্রদ্র্য বিমোচন (৩) গবেষণা ও প্রকাশনা (৪) স্বাস্থ্যসেবা (৫) সাংস্কৃতিক ও (৬) জনসেবামূলক কাজে অবদান রেখে চলেছে। তিনি মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে দেশ/বিদেশে অসংখ্য আশেক-ভক্তগণকে মানুষের খেদমত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। জাতি- ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য এই দয়া ও করুণাধারা উন্মুক্ত রেখেছেন।

গাউসিয়া হক মনজিল গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর ত্বরিকা ও আদর্শের কিংবদন্তি পরিচর্যাকেন্দ্র এবং জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে খোদা-তালাসী বান্দাগণের আশ্রয় কেন্দ্র। তাই কবি লিখে গেছেন- তোমার দ্বারেতে ভিখারীর আগমন ও ভাণ্ডারী ধন রে- তোমার দ্বারেতে ভিখারীর আগমন। আসন্ন মহান ১০ পৌষ এই মহান অলির পবিত্র খোশরোজ শরিফ- আশেক ভক্তের মিলন মেলা। এই দিন পবিত্র কোরআন শরিফ পাঠ নফল ইবাদত, জিকির-এ সামা সহ আশেক ভক্তের সমাগমে ভরপুর হয়ে উঠবে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ। মহান আল্লাহ্ পাক এই মহান অলির পবিত্র খোশরোজ শরিফের উসিলায় বিশ্ববাসীকে মুক্তি দান করুন। শত্রু-মিত্র সকলের প্রতি দয়া করুন। মজলুমের উপর জুলুমকারীদেরকে হেদায়েত দান করুন। কবির ভাষায় বলি মারহাবা মারহাবা বল সবে ভবে শাহানশাহ্ জিয়া এসেছে।

এই পবিত্র দিবসের বরকত, নেয়ামত, রহমত আমাদের চলার পথে পাথেয় হোক। আমিন