শফিউল আলম, রাউজানবার্তাঃ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রধান আকর্ষণ প্রতীমা তৈরীর কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে চট্টগ্রামের রাউজানের প্রতিমা শিল্পীরা।
নির্ধারিত সময়ে পূজার্থীদের প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে কারখানার কারিগররা এখন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছে না। খবর নিয়ে যায় উপজেলার বিভিন্নস্থানে রয়েছে আটটি প্রতিমা তৈরীর কারখানা। এসব কারখানায় সারা বছর ঢিলেঢালা ভাবে দেব দেবীর প্রতিমা তৈরীর কাজ চললেও ব্যস্ততা বাড়ে শারদীয় দুর্গোৎসব ঘনিয়ে এলে।
কারখানার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন দুর্গা পূজার অন্তত তিন মাস আগে থেকে তারা প্রতিমার অর্ডার পেয়ে থাকেন। পূজার্থীদের দেখানো নক্সায় প্রতিমা তৈরী করতে হয় নিঁখুত ভাবে। একাজ করতে গিয়ে সময়, ব্যয় দুটোর দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।
উপজেলার নোয়াপাড়া পল্লী মঙ্গল সমিতির সাথে অবস্থিত অনিল পালের কারখানায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ জন কারিগর রাতদিন ব্যস্ততম সময় অতিবিহিত করছে দুর্গোৎসবের প্রতিমা তৈরীতে। এখানে কর্মরত শিল্পীদের মধ্যে কেউ প্রতিমা তৈরীর জন্য মাটি উপযোগি করছে। কেউ তৈরী করা প্রতিমা রোদে শুকাচ্ছে, কেউ কেউ হাতের তুলিতে প্রতিমার গায়ে নানা রঙ অলপনা তুলছে।
এই কারখানার মৃৎশিল্পী অনিল পাল বলেছেন তার এই কর্ম বংশ পরম্পরায়। একাজ করছেন দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে। সারা বছর নানা দেব দেবির প্রতিমা তৈরী করেন বিক্রির জন্য। তার অভিযোগ একাজে ব্যবহৃত প্রতিটি উপকরণের দাম এখন চড়া। রাত দিন কাজ করে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। প্রাচীণ এই মৃৎ শিল্পকর্মকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি জানান ধর্মীয় আচার আচরণের কারণে ও বাপ দাদার দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে তিনি পেশা ছাড়তে পাচ্ছেন না।
এই মৃৎশিল্পী জানিয়েছেন এবার আসন্ন শারদীয় দুর্গপূজার জন্য বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের ৪০টি প্রতীমা তৈরীর অর্ডার নিয়েছেন। ডিজাইন ভেদে এসব অর্ডার নেয়া হয়েছে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। একাজ করে কারিগরদের বেতন দিয়ে তেমন কিছু থাকবে না।
রাউজান পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আচার্য্য পাড়া এলাকার প্রতিমা তৈরীর মৃৎ শিল্পী প্রশান্ত আচার্য্য বলেন, প্রতি বছর দূর্গা প্রতিমা তৈরী করেন ২০ থেকে ২২টি। এ বছর অর্ডান নিয়েছেন ২০টি প্রতিমার। তৎমধ্যে নিজের কারখানায় তৈরী করছেন ১৯টি প্রতিমা। বাকি প্রতিমা গুলো স্ব স্ব পূজা মন্ডপে তাদের দেয়া ডিজাইন নক্সা অনুযায়ী।
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের এলাকার ঢেউয়াপাড়া অপরাজিতা সেবাশ্রমে অবস্থিত প্রতিমা তৈরীর কারখানায় এ বছর প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন রূপন চক্রবর্তী নামে প্রবীণ এক মৃৎ শিল্পী। তিনি জানান, ১২জন কর্মচারী নিয়ে এ বছর ১১টি প্রতিমা তৈরী করছেন।
এই মৃৎশিল্পীর মত উপজেলার বিভিন্নস্থানে কারখানা গড়ে তোলে প্রতিমা তৈরী করছেন আরো অনেকেই। এসব কারখানা রয়েছে পৌরসভার ফকিরহাট বাজার, জলিলনগর জগন্নাথ সেবাশ্রম, শরতের দোকান, গহিরা, ডাবুয়া, চিকদাইর, বিনাজুরী পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায়। এখন সব কারখানাতে রয়েছে দুর্গোৎসবের প্রতিমা তৈরীর ব্যস্ততা। একাজে জড়িত শিল্পী, কারিগর সকলেরই শংকা প্রকাশ করে বলেছেন উচ্চ মূল্যের বাজারে সরকারের সহয়োগিতা ছাড়া আগামীতে এই প্রাচীণ শিল্পটিকে ঠিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার নিয়াজ মোরশেদ বলেন, সনাতন ধর্মীয় অনুসারীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। দুর্গাপুজার সময়ে সরকার থেকে পুজামন্ডপের জন্য চাউল বরাদ্ব দেওয়া হয়। এবার এপর্যন্ত রাউজান পৌর এলাকা ও ১৪টি ইউনিয়নে ২শত ২৮টি পুজা মন্ডপের তালিকা পাওয়া গেছে । তালিকার পরিমান আরো বাড়তে পারে। পুজা মন্ডপের তালিকা চুড়ান্ড করে উধত্বন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর পুজা মন্ডপের জন্য বরাদ্ব দেবে সরকার ।
উল্লেখ্য, সারা দেশে আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। রাউজানে প্রায় ৩০জন মৃৎ শিল্পসহ তিন’শ জন কারিগর প্রতিমা তৈরী কাজে নিয়োজিত।