শফিউল আলম, রাউজানবার্তাঃ
আগামী ২৪ জানুয়ারী শুক্রবার গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারী (কঃ)’র ১১৯ তম ওরশ শরীফ মহাসমারোহে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফ অনুষ্ঠিত হবে।
ওরশ উপলক্ষে বিভিন্ন মনজিল ব্যপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষেও নেওয়া হয়েছে ব্যপক প্রস্তুতি। ওরশ শরীফে প্রশাসনের হিসাবে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে পারে। তবে আশেক ভক্ত ও বিভিন্ন মনজিলের হিসাব মতে ১০ মাঘ ওরশ শরীফ এক সপ্তাহ ধরে আশকে ভক্ত আসা যাওয়া করে। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে। রওজা শরিফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরস্ শরিফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
আগামী ২৪ জানুয়ারী শুক্রবার প্রধান দিবসের দিন স্ব স্ব মনজিলে কেন্দ্রিয় মিলাদ মাহ্ফিল ও আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে ।আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন স্ব স্ব মনজিলের প্রধানগণ।
প্রধান দিবসের দিন ছাড়াও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন মনজিল ব্যপক কর্মসূচী পালন করে আসছে। ওরশ শরীফ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সাথে আহমদিয়া মনজিল ও গাউছিয়া হক মনজিলের প্রশাসনিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উরস শরিফ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, দেশ-বিদেশ হতে আগত আশেক-ভক্ত ও জায়েরীনদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, বিভিন্ন হোটেল খাবারের দাম নিয়ন্ত্রন ও আইন শৃংখলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট, পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার মোতায়েনসহ মন্জিলের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ওরশ উপলক্ষে স্পেশাল এক্সিকিউটিব ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ফোর্স, ১০৫ সদস্য বিশিষ্ট পুরুষ মহিলা আনসার টিম আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন মনজিলের সমন্বয়ে আগত আশেক ভক্তের সুবিধার্থে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মহান ১০ই মাঘ উরস শরিফ উপলক্ষে গাউসিয়া হক মন্জিল প্রতিষ্ঠিত শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ট্রাস্ট-এর ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাইজভান্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ-এর শাখা কমিটির উদ্যোগে স্ব স্ব এলাকার জামে মসজিদে খতমে কোরআন এবং মিলাদ মাহফিল আয়োজন, ১০ মাঘ ২৪ জানুয়ারি বুধবার উরসের দিন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, ইসলামের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্বলিত দুর্লভ চিত্র প্রদর্শনী, উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা সম্বলিত প্রচার, ন্যায্যমূল্যে খাবারের দোকান, বিশুদ্ধ পানীয় জল, ওযু এবং অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা,
২৫ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় প্রধান সড়ক হতে হযরত সাহেব কেবলার পুকুর পাড় পর্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে ১১তম আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন, নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শিশু-কিশোর সমাবেশ উপলক্ষে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান,উলামা সমাবেশ, ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন মহিলাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও জ্ঞানানুশীলনমূলক সংগঠন ‘দি মেসেজ’র উদ্যোগে বিশেষ মহিলা মাহফিল, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ষোড়শ শিশু-কিশোর সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে ১০ম শিক্ষক সমাবেশ, ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন মহিলাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও জ্ঞানানুশীলনমূলক সংগঠন ‘আলোর পথে’র উদ্যোগে বিশেষ মহিলা মাহফিল, শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) বৃত্তি তহবিল এর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান।
এদিকে ওরশ শরীফের এক সপ্তাহ পুর্ব থেকেদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশেক ভক্ত আসতে শুরু করেছে। ঢোল বাদ্য সহকার গরু ছাগল মহিষসহ বিভিন্ন হাদিয়া নিয়ে দরবারে আসেন।
রওজায় রওজায় চলে আশেক ভক্তের ইবাদত বন্দেগী, জিকির আজগার,মিলাদ মাহফিল ও জিয়ারত। ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঢোল বাদ্য বাজনা ও মাইজভান্ডারী কালাম পরিবেশন। এক কথায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ। এছাড়া ওরশ শরীফ কেন্দ্র করে বসে গ্রামীণ লোকজ মেলা।
মেলায় পোষাক,রকমারী খাবার গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দা ছুরি বটি,বেত সামগ্রী, বেড়া, চাটাই, মাছধরার ফাঁদ, হাতপাখা, মোড়া, ফুলদানি,হাঁড়ি পাতিলসহ ঘরে ব্যবহারের ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই মাঘের মেলার জন্য ঘরের বউ ঝিঁয়েরাও অপেক্ষয় থাকে।
স্থাণীয়দের পাশাপাশি উপজাতীরাও এ মেলায় ছুটে আসে।
এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ বড় বড় সাইজের জাপনী মুলা বিক্রি যা ভান্ডারী মূলা নামে খ্যাত। মেলার বিভিন্ন স্থানে এলাকার কৃষকরা বড় বড় সাইজের মূলা নিয়ে বসে। মেলায় ভান্ডারী মুলা ক্রয় করতে ক্রেতাদের ভীড় জমে উঠে ।
১০ মাঘ, হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী শাহসূফি হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহর (ক.) ওফাত দিবস। বাংলা ১৩১৩ সনের ১০ মাঘ মোতাবেক ইংরেজী ১৯০৬ সনের ২৩ জানুয়ারী তিনি ওফাত প্রাপ্ত হন। (সুত্র মাসিক আলোকধারা)। এ তারিখে প্রতিবছর মাইজভা-ার দরবার শরীফে মহাসমারোহে ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
আবহমান বাংলাকে পরিপূর্ণ রূপে খুঁজে পাওয়া যায় এখানে। মাইজভা-ার দরবার শরীফে সকল ঘরে চলে এ উপলক্ষ্যে জেয়াফত। দরবারে আগত লক্ষ লক্ষ মানুষ এখান থেকে খালি মুখে ফিরে যেতে পারেন না, ফিরে যান না। তারা কেউ খালি হাতে আসেন না। প্রত্যেক দল সাথে করে নিয়ে আসেন মহিষ গরু ছাগল মোরগ চাউল রান্নার মসল্লা সামগ্রী। জমা দেন দরবারে। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলে রান্না বান্না ও পরিবেশনের কাজ। যে যার নিয়ত ও মানত করে খায়। এ দরবারের তবররুক খেয়ে জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন এমন লোকের সংখ্যাও অগণিত। রান্না বান্নার খানা পিনার এ বিশাল আয়োজন প্রকৃত অর্থে এক বিষ্ময়কর ব্যাপার লক্ষ লক্ষ মানুষেরা সারিবদ্ধভাবে শৃঙ্খলার সহিত খেয়ে এখান থেকে যান। এর বৈশিষ্ট্য হলো এ খানা পিনায় ধনী গরীব সকলের জন্য একই ব্যবস্থা। খানা পিনা সরবরাহ করা হয় মাটির সানকিতে (বছি) বর্তমানে মেলামাইনের বাসনে (প্লেট)।
হাজার হাজার মাটির সানকির প্রয়োজন হয় মাইজভান্ডার উরশ এ। এই মাইজভান্ডার শরীফই বলতে গেলে চট্টগ্রামের শত শত কুমার পরিবারকে টিকিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন। অনেকেরই জানতে ইচ্ছে হয়, এখানে ১০ মাঘ কত মহিষ গরু ছাগল জবাই হয়? হিসেব করে এর জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। বলতে গেলে হাজারো হাজার। সে এক এলাহি কান্ড। কেবল মাইজভান্ডার দরবার শরীফে নয় ১০ মাঘ সারা বাংলাদেশে এমন কি দেশের বাইরে যেখানে ভক্ত অনুসারীরা আছেন কিন্তু কোনো না কোনো কারণে দরবারে হাজির হতে পারেন নাই। তারা নিজ নিজ অবস্থানে সমবেতভাবে ওরশ শরীফের আয়োজন করেন। এই ওরশ শরীফ বাঙালির জাতীয় অনুষ্ঠানের দাবীদার। বিশেষ করে জাতি ধর্ম দলমত বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের নিঃসংকোচ ও অবাধ অংশগ্রহন এ ওরশ শরীফকে সার্বজনীনভাবে গৌরবের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।