রাউজানের করাত কল গিলে খাচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল

শফিউল আলম, রাউজানবার্তাঃ
কর্ণফুলী নদী ও সর্তা খাল দিয়ে প্রতিদিন ব্যাপক হারে চলছে কাঠ পাচার। নদীর তীরে গড়ে ওঠা করাত কলে এসব কাঠ সাইজ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে অবাধে।

সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলার ঘাট, লাম্বুর হাট, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরী হাট, কচুখাইন এলাকায় ২০টির অধিক করাত কল রয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত হালদা নদীর তীরে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন গনিমিয়ার ঘাট, উরকিরচর ইউনিয়নের মদুনাঘাট এলাকায় রয়েছে আরো দশটি করাত কল।

রাউজান উপজেলার কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীর তীরে গড়ে ওঠা করাত কল ছাড়াও রাউজানের হলদিয়া আমির হাট, জানি পাথর, জগ্ননাথ হাট, চিকদাইর হক বাজার, গহিরা ইউনিয়নের দলই নগর, কাল চান্দ চৌধুরী হাট, দক্ষিন সর্তা, রাউজান উপজেলা সদরের সাব রেজিষ্ট্রারের অফিসের পাশে, রাউজান পশু হাসপাতালে পূর্ব পাশে রাউজান জলিল নগর বাস স্টেশন, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ডোমখালী, কাগতিয়া বাজার, রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাইন্যা পুকুর, পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের অলিমিয়ার হাট, পাহাড়তলী ইউনিয়নের পাহাড়তলী চৌমুহনী, কদলপুর ইউনিয়নের সোমবাইজ্যা হাটের উত্তর পাশে, ৭নং রাউজান ইউনিয়নের রমজান আলী হাট, নাতোয়ান বাগিচা, নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের নতুন হাট এলাকায় রয়েছে শতাধিক করাত কল।

করাত কলের কয়েকজন মালিক জানান, প্রতিদিন পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী, বড়ইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী পাহাড়ি এলাকা থেকে বিপুল পরিমান বৃক্ষ নিধন করে কর্ণফুলী নদী দিয়ে বাশের চালার সাথে বেধে ও যান্ত্রিক নৌযানে করে কাঠ পাচার করছে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা। কর্ণফুলী নদী দিয়ে পাচার করা কাঠের মধ্যে পার্বত্য এলাকার সংরক্ষিত বনের বৃক্ষ নিধন করা কাঠ বেশি।

এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন, নদী ও সড়ক পথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ কাঠ অবৈধভাবে পাচার করা হলেও সংশ্লিষ্টরা নিরবতা পালন করে আসছে। ফলে ভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করাসহ পরিবেশের জলবায়ুর উপরেও ক্ষতির সম্ভাবনা বিরাজমান। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বার্মাছড়ি থেকে সর্তার খাল দিয়ে বাশের চালার সাথে ভাসিয়ে বিপুল পরিমান সংরক্ষিত বন এলাকা থেকে নিধন করা বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রাউজানের গহিরা কালচান্দ চৌধুরী হাট, হলদিয়া আমির হাট, এলাকায় করাত কলে আনা হয়।

করাত কলে সংরক্ষিত বন এলাকার নিধন করা বৃক্ষ সাইজ করে ট্রাক, জীপ, টমটম করে রাউজান হাটহাজারী, ও চট্টগ্রাম নগরী, দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করেন কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

এছাড়া ও গহিরা কালচান্দ চৌধুরী হাট এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক ফার্নিসার তৈয়ারীর দোকান। সংরক্ষিত বন এলাকার কাঠ দিয়ে তৈয়ারী করা হয় বিভিন্ন প্রকারের ফার্নিসার। ফার্নিসারের দোকানে তৈয়ারী করা ফার্নিসার দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ভর্তি করে ক্রয় করে নিয়ে যায় ক্রেতারা।

রাউজান উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, রাউজানে লাইসেন্সধারী করাতকল রয়েছে ৩১ টি। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাত কল কয়টি রয়েছে তা জানা নেই ।

রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক করাত কল রয়েছে। কোন লাইসেন্স না নিয়ে অবৈধভাবে করাতকল গুলোতে সংরক্ষিত বন এলাকার নিধন করা বৃক্ষ প্রতিদিন সাইজ করা হলে ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরবতা পালন করছে।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ইছামতি রেঞ্জের আওতধিন রাউজান ঢালার মুখ ষ্টেশন অফিসের দায়িত্বরত ষ্টেশন অফিসার উজ্জল কান্তি মজুমদারকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে. ষ্টেশন অফিসার উজ্জল কান্তি মজুমদার বলেন, কর্ণফুলী নদী দিয়ে কাঠ পাচারের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের আওয়াতাধীন রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জসহ কয়েকটি বিট অফিসের এবং সর্তাখাল দিয়ে কাঠ পাচারের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সর্তা ফরেষ্ট বিটের। তার আওতাধীন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন যেসব অবৈধ করাত কল রয়েছে ঐ করত কলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।