শফিউল আলম, রাউজানবার্তাঃ
চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি ঘোষণার জেরে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রাউজান উপজেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে এবং পরবর্তীতে মুন্সির ঘাটা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে রাউজান উপজেলা ও পৌরসভার সদ্য নির্বাচিত বিএনপি সভাপতি- অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, রাউজান পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু আহম্মদ, সাধারন সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খানের নেতৃত্বে নবাগত ইউএনও'র সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন।
এরা প্রত্যেকেই বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী। এ খবর উপজেলা পরিষদ চত্তরে জড়ো হতে থাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত নেতাকর্মীরা। তাঁরা এক পর্যায়ে সাক্ষাৎ চলাকালীন সময়ে প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে হট্টগোল বাঁধে। এবং একটি পক্ষ গোলাম আকবর খন্দকার গ্রুপে কিছু অনুসারীকে ভিতরে প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি নিয়ে হট্টগোলের সূত্রপাত ঘটে বলে জানা যায়।
সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এলে প্রশাসনিক ভবন চত্ত্বরে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রুপের সাথে প্রাথমিকভাবে তর্কতর্কি, ধাক্কাধাক্কি, মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় পুলিশ দু’পক্ষের লোকজনকে উপজেলা পরিষদ মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেন। পরে উভয় গ্রুপের অনুসারীরা উপজেলা চত্ত্বর হতে পৃথকভাবে মিছিল সহকারে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের মুন্সির ঘটায় পৌঁছালে উভয় পক্ষ পুনরায় মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৫/১৬ আহত হওয়া খবর পাওয়া গেলেও আহতদের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় ৫ জনের।
এই বিষয়ে রাউজান উপজেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের সাথে প্রোগ্রাম করছি হঠাৎ কিছু দুষ্কৃতিকারী হামলা করে। হামলায় আমাদের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি জসীম চৌধুরীসহ ১০-১২ জন আহত হয়। তাদের হামলায় নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় আহতদের সঠিক তথ্য দিতে পারছি না।
গত ১৭ বছর যারা বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না, তারাই এই হামলা করে। তারা ২৪ ঘন্টা উপজেলা প্রশাসন ঘিরে রাখে। বিএনপির কোন নেতাকর্মী ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাঁধা দেয় লাঞ্ছিত করে। আমরা জেলা নেতৃত্বের সাথে আলোচনা মাধ্যমে আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করব।
এই বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত উত্তর জেলা যুবদলের সহ সভাপতি সাবের সুলতান কাজল বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে তারা পকেট কমিটি করেছে। সেই পকেট কমিটি স্বৈরাচারীর দোসরদের সাথে নিয়ে উপজেলায় আসলে সাধারণ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরা সাধারণ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে মোহাম্মদ শহীদ, মোহাম্মদ নবী, মোহাম্মদ রিয়াদ, মোহাম্মদ রাব্বীসহ আরো ৩জন আহত হয়। তিনি আরো বলেন, যারা দীর্ঘ ১৭ বছর রাউজানে আসতে পারে নি, যাদের ৩০-৪০টি মামলায় জর্জরিত তাদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি করায় সাধারণ নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে বদ্ধ পরিকর।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়। এই সময় ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায় নি। তবে, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, আমার অফিসের ভেতরে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নি। আজ (বৃহস্পতিবার) উপজেলা পরিষদ মাঠে দুটি অনুষ্ঠান চলছে। বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। এই সময় এসিল্যান্ড, ওসি উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে ওরা চলে যায়। মারামারির বিষয়ে কিছুই জানি না।
উল্লেখ্য, বিএনপির গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রুপের প্রতিবাদে গত ১৮ জানুয়ারী রাউজান উপজেলা ও পৌরসভার পূর্বঘোষিত কাউন্সিল স্থগিত হয়। গত ২০ জানুয়ারি সোস্যাল মিডিয়ায় গত ১৪ জানুয়ারি তারিখে স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলার প্যাডে মাধ্যমে উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাম ঘোষণা করে। এরপর হতে রাউজান জুড়ে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তার ধারাবাহিকতায় উপজেলা সদরে এই ঘটনা ঘটে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: সাহেদুর রহমান মোরশেদ
মোবাইল: ০১৮১৮ ১১৭৪৭০, ইমেইল: raozan786@gmail.com
© raozanbarta24.com 2023. All Rights Reserved